বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

এক গাছেই মিলবে ২০০ জাতের আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ

এক গাছেই মিলবে ২০০ জাতের আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ

স্বদেশ ডেস্ক:

একটি বা দুটি নয়, ২০০ জাতের আম মিলবে এক গাছে। এ অসম্ভবকে সম্ভব করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অবশ্য আমবিজ্ঞানীরা বলছেন, এতে জটিল কোনো সমীকরণ নেই। একটি গাছে যত ধরনের কলম করা হবে, ঠিক তত ধরনের বা জাতের আম ধরবে। আগামী মৌসুম থেকেই এ গাছে ফলন আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউসে ঢুকতেই মূল ফটক পেরিয়ে বাম দিকেই একটি আমগাছ। কয়েক মাস আগে বিশাল বড় আমগাছটি কেটে ছোট করা হয়েছে। সেখান থেকে বের হওয়া নতুন কচি ডালে করা হয়েছে ২০০ জাতের কলম। ইতোমধ্যে গ্রাফটিং বা কলম থেকেও বের হয়েছে হরেকরকম জাতের কচি ডালপালা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কয়েক দশকের একটি বড় ও পুরাতন গাছে দুইশ জাতের আমের বিশাল সংগ্রহশালা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব (আম) গবেষণা কেন্দ্র, মনামিনা কৃষি খামার ও বিভিন্ন এলাকার কৃষকের থেকে সায়ন সংগ্রহ করা হয়েছে এ ২০০ জাতের। এ উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন প্রায় সব আমের সংগ্রহশালা তৈরি হবে, তেমনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমের রাজধানী হিসেবে পর্যটন খাতেও ভূমিকা রাখবে। ফলন এলে গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকেও রেকর্ড করবে এ আমগাছ- এমন আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র আরও জানায়, প্রচলিত বা পরিচিত জাতগুলো ছাড়াও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাম দেওয়া প্রায় ১০০ জাতের আম থাকবে এ গাছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- ফজলি, বোম্বাই ফজলি, সুরমা ফজলি, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, লখনা, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, রানী পছন্দ, ক্ষীরসাপাত, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, বারি আম-২, বারি-৩, মোহনভোগ, ক্ষীরমন, দুধস্বর, গৌড়মতি, সুন্দরী, সুবর্ণরেখা, কালাপাহাড়, বউ ভুলানী, জমরুদ, অরুনা, চৌষা, রাজভোগ, কোহিতুর, বিলু পছন্দ, কাগরী, চিনিবাসা, দুধকুমার, সীতাভোগ, শোভা পছন্দ, লতিকা, রহনপুরি, হরমতি, ইলামতি, রানিভোগ, দিলখোস, তরুলতা, জৈষ্ঠ্যিভোগ, লাবণ্য, চাঁপাই সুন্দরী, মনময়ূরী, মধুমতি, ফুলকি প্রভৃতি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব (আম) গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, তিনি প্রায় ২০টি দুর্লভ জাতের সায়ন দিয়েছেন এ গাছে গ্রাফটিং করার জন্য। তিনি আরও বলেন, একটি গাছে ২০০ জাতের আম হবে কিনা, এটা নিয়ে জটিল কোনো সমীকরণ নেই। কারণ একটি গাছে যতগুলো গ্রাফটিং করা হবে, তত জাতের আম ধরবে। সায়ন সংগ্রহ করে সঠিক উপায়ে গ্রাফটিং বা কলম করার বিষয়টিই এখানে মুখ্য। এ উদ্যোগের ফলে অনেক জাতের জামপ্লাজম একটি গাছে সংগ্রহীত থাকবে। আম গবেষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদামতো খুব সহজেই সংগ্রহ ও গবেষণা করতে পারবেন। তবে এ ধরনের উদ্যোগের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা খুবই কম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউসের মালি মোজাম্মেল হোসেন ও নিরাপত্তাকর্মী নাসিম আল আরাফাত জানান, গাছটিতে গুটি জাতের আম ধরত। খেতেও তেমন ভালো ছিল না। তাই সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ আম গবেষকদের ডেকে এখানে ২০০ জাতের কলম করেছেন। এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। কারণ সার্কিট হাউসে বাইরে থেকে অনেক ভিআইপি আসেন। এখন তারা এখানে এলে গাছটি দেখে মুগ্ধ হবেন এবং সারাদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, জেলার আমের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে এমন উদ্যোগ। দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে জেলার আমভিত্তিক পর্যটন।

ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের উদ্যোক্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ মুঠোফোনে বলেন, সম্প্রতি বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমের প্রায় ১০০টি জাতের নামকরণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রচলিত ছাড়াও এসব নতুন নাম দেওয়া জাতের আম সংগ্রহে রাখাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পৃথিবীর কোথাও এমন আছে বলে আমার জানা নেই যে, একটি গাছে এতগুলো জাতের আম রয়েছে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর্যটনকে আকর্ষণ করবে। এতে জেলার পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আমার বিশ্বাস।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877